নিজস্ব প্রতিবেদক: জামালপুর সদর উপজেলায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্লাবের সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত নাস্তার টাকা ও দপ্তরিদের সম্মানী আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে।
গত কয়েক সপ্তাহে ১০টি কেন্দ্র পরিদর্শন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও বাস্তব চিত্র
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে শিশুদের আবৃত্তি, সংগীত শিক্ষা, কারাতে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হয়। জামালপুর সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট ১৬টি ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে প্রতি ক্লাবে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে।
এসব ক্লাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতি শুক্র ও শনিবার শিক্ষার্থীদের ক্লাস হয়। প্রতিটি ক্লাবে নাস্তার জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ৩০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করা হয়নি।
বরাদ্দ ও ব্যয়ের অসঙ্গতি
প্রতি ক্লাসে শিক্ষার্থীপ্রতি ৩০ টাকা হিসাবে ৪৮ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ১,৪৪০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ভ্যাটসহ অন্যান্য খরচ বাদে ১,২৮৪ টাকা শিক্ষার্থীদের নাস্তার জন্য ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৩০০-৪৫০ টাকার নাস্তা দেওয়া হয়।
নান্দিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল এবং প্রত্যেককে ১৫ টাকার নাস্তা দেওয়া হয়েছে—যার মধ্যে ছিল ৫ টাকার এক প্যাকেট বিস্কুট, ৫ টাকার কেক এবং ৫ টাকার ডেইরিমিল্ক চকলেট।
একইভাবে, নরুন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সংগীত শিক্ষক জানান, তাদের কেন্দ্রে গড়ে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে এবং ১৫ জনের কম উপস্থিত থাকলে ১৫ টাকা করে নাস্তা দেওয়া হয়।
দপ্তরিদের সম্মানীও আত্মসাতের অভিযোগ
প্রতিটি ক্লাবের জন্য মাসিক ৫০০ টাকা করে দপ্তরি সম্মানী বরাদ্দ থাকলেও, সরেজমিনে দেখা গেছে, দপ্তরিরা মাসে মাত্র ২০০ টাকা করে পাচ্ছেন।
জেন্ডার প্রমোটরদের বক্তব্য
ক্লাবগুলোর নাস্তা সরবরাহ করেন তিনজন জেন্ডার প্রমোটর। তাদের দুজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস থেকে প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং সেই টাকার মধ্যেই নাস্তার ব্যবস্থা করতে হয়। বরাদ্দ বাড়ানো না হলে উন্নত মানের নাস্তা দেওয়া সম্ভব নয়।
অভিযুক্ত কর্মকর্তার বক্তব্য
এ বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বলেন, “নাস্তার বরাদ্দ থেকে দপ্তরিদের ২০০ টাকা সম্মানি, চরাঞ্চলের দুটি কেন্দ্রের শিক্ষকদের যাতায়াত খরচ এবং তবলা ও হারমোনিয়াম মেরামতের খরচ দেওয়া হয়। নাস্তার টাকার বাইরে আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, “বিষয়টি প্রথমবারের মতো শুনলাম। খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কামরুন্নাহারও বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।